ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৫/০১/২০২৫ ১০:০৫ এএম

টিবিএস::
চরম তারল্য সংকট সত্ত্বেও প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অ্যানুয়াল বিজনেস কনফারেন্স করতে চেয়েছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। তবে ব্যাংকটির সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ কনফারেন্স ‘না’ করার নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিবর্তে ব্যাংকটিকে ঢাকায় নিজস্ব কার্যালয়ে স্বল্প খরচে সম্মেলন আয়োজন করতে বলা হয়।

এর আগে বোর্ড সভায় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কক্সবাজারে সম্মেলন করার আবেদন করে চিঠি দিয়েছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারের বেওয়াচ হোটেলে অ্যানুয়াল বিজনেস কনফারেন্স আয়োজন করতে যাচ্ছে। সেখানে ২৭০ জন অংশগ্রহণকারী থাকবে। ভ্যাট-ট্যাক্স ছাড়া এ অনুষ্ঠানের জন্য আনুমানিক খরচ ধরা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এস আলম ঋণের নামে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এসব অনিয়মের অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

‘ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ রয়েছে। আমানতকারীদের অর্থ ফিরিয়ে দিতেও হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকটি। এ পরিস্থিতিতে মধ্যে তাদের প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে কক্সবাজারে কনফারেন্স করা বেমানান। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি,’ যোগ করেন তিনি।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুস সাদাত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘আমরা কম খরচেই কক্সবাজারে বিজনেস কনফারেন্স করতে চেয়েছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল বছরের শুরুতে প্রত্যেক শাখা ব্যবস্থাপকদের নিয়ে কনফারেন্সটা করতে পারলে, তারা নতুন উদ্যামে কাজ করতে পারবেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খরচ কমিয়ে আনতে কনফারেন্স ঢাকায় করতে বলেছে। আমরা ঢাকাতেই ভিন্ন তারিখে কনফারেন্স করব।’

গত ২৫ আগস্ট এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন একজন উদ্যোক্তা শেয়ারধারীকে পরিচালক ও চারজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

পর্ষদ পুনর্গঠনের পর এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা ব্যাংকটির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর ব্যাংকটি থেকে নানা অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকটি আর্থিক সংকটে পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় দুই বছর ধরে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকটিকে সহায়তা দিয়ে আসছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর সেই সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ফান্ড পাওয়ার পর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তারল্য সংকট এখন কিছুটা কমলেও গত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চরম তারল্য সংকট ছিল।

গত অক্টোবরে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ব্যাংকটির কিছুটা তারল্য সংকট কমেছে। সেই সময়ে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা তোলার সুযোগ পেয়েছেন গ্রাহকেরা।

এখনও ঘাটতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা পাওয়ার পরও এখনও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ব্যাংকটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল ব্যাংককে গ্যারান্টির আওতায় পাওয়া ধারের অর্থ ব্যবহারে বেশকিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে একটি শর্ত ছিল পরিচালনা ব্যয় আগের বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না।

বর্তমানে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সুবিধায় এক হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্টের বিপরীতে ধার রয়েছে চার হাজার কোটি টাকা।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে থাকা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতিতে রয়েছে তিন হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতির কারণে এখন পর্যন্ত জরিমানা রয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের ‘স্ক্যাম সেন্টার’ থেকে বেঁচে ফেরা বাংলাদেশি ফয়সালের করুণ অভিজ্ঞতা

মাত্র ২১ বছর বয়স বাংলাদেশি নাগরিক ফয়সালের। সম্প্রতি মিয়ানমারের একটি স্ক্যাম সেন্টার থেকে উদ্ধার করে ...

রো‌হিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবায় ৩.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে জাপান

বাংলাদেশের কক্সবাজার-ভাসানচরে জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম টিকিয়ে রাখা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার জন্য ...